পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খাবার তৈরিতে যেমন রয়েছে ভিন্নতা। তেমনি স্বাদেও আছে রকমফের। ভোজন রশিকই শুধু নয়। খাবারের রীতি ও প্রস্তুত করার কৌশলও এক এক দেশে একেক রকম। আজ জানবো ইতালি, জাপান ও থাইল্যান্ডের নানা রকম খাবারের বৈচত্র।
ইতালি
স্বাভাবিকভাবেই ভোজনরসিকদের পছন্দের তালিকায় সবার উপরে ইতালির রোম। প্রাচীন এই শহরটির খাবারের জন্য বেশ সুনাম রয়েছে। শুধু নানা সময়ে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার খেতেই শহরটিতে আসেন অসংখ্য পর্যটক। রোমান সাম্রাজ্যের পর থেকে এর ঐতিহাসিক পটভূমি এবং ভূমধ্যসাগরে যে ভৌগলিক অবস্থার কারণেও রয়েছে এর রান্নাও বৈচিত্র্যময়। ব্রেড রোল, মাখন, জ্যাম ও কফি দিয়ে প্রাতরাশ সারেন ইতালির বাসিন্দারা। যার পোশাকি নাম কোলাজিওন। পাস্তা, রিসোটো বা পেঁয়াজ এবং মাখন দিয়ে বোলে ভাত রান্না করা, আগুনের উপরে বোলেলনে রান্না করা ভুট্টা সব সময়ই বিখ্যাত। অন্য দিকে স্প্যাঘেটি এবং ম্যাকারনি শুকনো পাস্তাও দক্ষিণ ইতালির একটি নিয়মিত খাদ্য।
ইতালির তিনপাশে সমুদ্রবেষ্টিত এলাকায় প্রচলিত আছে সীফুড। ইটালিয়ানরা জলপাই তেল প্রচুর পরিমাণে খাবারের মধ্যে ব্যবহার করে। ইটালিয়ান বিখ্যাত কয়েকটি খাবার হলো—সার্ডিনিয়ান- স্টাফড বেগুন, অ্যান্টিপাসটো- সালাদ, ছাগলের পনির এবং সালসা রুস্টিকার সাথে ছোলা প্যানেল, গ্রিলড ম্যাকেরেল সিসিলিয়ান ক্যাপার, ইতালিয়ান আলু স্যুপ, ইতালিয়ান রামেন, চিকেন অলা ডায়াভোলা, টোস্টেড পিস্তা, টাস্কান, ইতালিয়ান সীফুড স্টু, পনির ও মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন আইটেম।
জাপান
সিদ্ধ ভাত, সুপ, মাছ মূলত খায় জাপানিজরা। এরসঙ্গে আচার বা সয়াবিনের কোনও পদও তারা খেয়ে থাকে। ভাত হচ্ছে জাপানিদের নিয়মিত খাবার। তবে তারা সাধারণত বাদামি চালের ভাত খেতে পছন্দ করে। এটি উচ্চ ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ যা হার্ট ভাল রাখতে সহায়তা করে। আরো নানাবিধ কারণে যেমন ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, শরীরে সঠিক প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেড সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় শক্তি যোগানে বিশেষভাবে কার্যকর এই বাদামি চাল। জাপানিরা সাধারণত স্বাস্থ্যকর গম থেকে তৈরি নিম্ন কার্বোহাইড্রেড সমৃদ্ধ নুডুলস খেয়ে থাকে। সাধারণত সব ধরনের ফল মূল শরীর ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে। তবে ফুজি আপেল জাপানিদের প্রিয় ফল। তারা তাদের অঞ্চলের পেরসিমন ও মান্দারিন নামের বিশেষ ধরনের কমলা ও খেতে পছন্দ করে যা স্বাদে অনন্য। অঞ্চল ভেদে মাছের প্রপ্যতা ভিন্ন রকম। তবে জাপানিদের প্রিয় মাছ হলো ম্যাকেরেল ও স্যালমন। জাপানিরা প্রায় সব ধরনের শাক সবজি বিশেষ করে বেগুন, শিম, মাশরুম, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া, আলু, কচি বাশের কেরুল, মুলা, গাজর ও বিভিন্ন সামুদ্রিক শৈবাল খেতে পছন্দ করে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন বীজ জাতীয় খাবার যেমন সয়াবিন, খাবার উপযোগী বিভিন্ন ঘাসের বীজ, বিকল্প দুগ্ধ জাতীয় খাবার হিসাবে সয়া মিল্ক থেকে তৈরি টফু খেয়ে থাকে যা অনেক স্বাস্থ্যকর ও এন্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর। এ সকল ডায়েট তালিকার খাবারের সাথে জাপানিদের সব সময়কার অতী গুরুত্বপূর্ণ পানিয় হচ্ছে চা এবং তা অবশ্যই গ্রিন টি যা অল্প মাত্রায় ক্যাফেইন এবং অধিক মাত্রায় পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড নামের দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
জাপানিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবারের সময় হলো সকালের নাস্তা। তারা প্রতিদিন সকালের নাস্তাকে খুব প্রাধন্য দেয়। সাধারণত তারা সকালে মিশো সুপ, একটি মান্দারিন আর এক কাপ গ্রিন টি পান করে। বিশেষ করে তারা সকালে মিশো সুপ খায় কারন এটা কম চর্বিযুক্ত। এখানে আপনি তিনটি লাল আটার রুটি খেতে পারেন শাক সবজি দিয়ে।
জাপানি লোকেরা দূপুরে এক বাটি সুসি সয়া সস দিয়ে খায় যা কাঁচা মাছ দিয়ে তৈরি। সাথে মাশরুম দিয়ে এক বাটি নুডুলস ও একটি আপচ। আর সকালের মতই এক কাপ গ্রিন টি।
জাপানিদের রাতের খাবার তালিকায় থাকে এক বাটি ভাত, একটি কমলা ও সসিমি যা বিভিন্ন মাছের সমন্বয়ে তৈরি একটি ঐতিহ্যবাহি জাপানি খাবার। আর প্রতিবেলা খাবারের পর তারা এক কাপ গ্রিন টি পান করতে পছন্দ করে।
থাইল্যান্ড
সারা বিশ্বেই থাইল্যান্ডের খাবার বিখ্যাত। বাংলাদেশের মতো প্রায় সব দেশেই থাই রেস্টুরেন্ট আছে। থাইল্যান্ডে ডিনার ও ব্রেকফাস্টের মধ্যে সেরকম কোনও পার্থক্য থাকে না। দুবেলাতেই তারা একই খাবার খেয়ে থাকে। মূলত মেনুতে থাকে ভাত, মাংস, মাশরুম ও কিছু আঞ্চলিক সবজি। স্টার ফ্রাই, স্যুপ, কারি—এ ধরনের খাবার তৈরি করতেই থাইরা অনেক বেশি পাতা বা হার্ব এবং মরিচ ব্যবহার করে। এর মধ্যে লাল মরিচের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া খাবারকে মসলাদার করতে রান্নায় প্রচুর পেঁয়াজ, রসুন, আদা, লেমনগ্রাস, পুদিনাপাতা দেয়া হয়। ‘কায়েং তাই প্লা’ নামের সবজি ও শুঁটকি দিয়ে বানানো তরকারিকে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি ঝাল খাবার বলে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া লাল মরিচের পেস্ট দিয়ে তৈরি মাছ, মাংস বা সবজির বিভিন্ন রেড কারিও বেশ ঝাল হয়ে থাকে।
ভয়েসটিভি/এএস